স্নায়ু কলা : উচ্চশ্রেণির প্রাণীতে যেসব কোশ স্নায়ুকলা গঠন করে সেগুলির গঠন বৈশিষ্ট্য হল দেহের এক আবের সংবাদ গ্রহণ এবং অপর দেহাংশে সংবাদ প্রেরণ। পরিবেশের যে-কোনো পরিবর্তন বা দেহের ভেতরের কোনও পরিবর্তন উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।
কোনো প্রদত্ত উদ্দীপনায়, এই কোশগুলি উত্তেজিত হয় এবং উদ্দীপনা স্নায়ু তন্তু মারফত নির্দিস্ট অঙ্গ্যে পরিবাহিত হয়। সুতরাং উত্তেজিতা এবং সংবাহিতা এই দুটি হল স্নায়ুকলার প্রাথমিক ধর্ম। স্নায়ুকলা প্রধানত স্নায়ুকোশ ও স্নায়ুতন্তু দিয়ে গঠিত।
স্নায়ু কলার সংজ্ঞা [Definition]
স্নায়ুকোশ দ্বারা গঠিত যে কলা যা প্রাণীদেহে বিভিন্ন উদ্দীপনা গ্রহণ, উদ্দীপনা প্রেরণ, উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলির সঙ্গ্যো সম্পর্কিত, তাকে স্নায়ু কলা বলে।
স্নায়ু কলার বিস্তৃতি [Distribution]
মস্তিষ্ক, সুষুম্নাকাণ্ড এবং স্নায়ুসূত্রে এই কলা থাকে।
স্নায়ু কলার উপাদান [Components]
স্নায়ুকলা দুটি প্রধান ধরনের কোশ দ্বারা গঠিত, যথা-1. স্নায়ুকোশ ও 2. ধারক কোশ।
স্নায়ুকোশ বা নিউরোন [Neurone]
নিউরোন হল স্নায়ুতন্ত্রের গঠনগত এবং কার্যগত একক। মানুষের স্নায়ুকোশ 10 বিলিয়নের চেয়েও বেশি। স্নায়ুকোশ বিভাজিত হয় না, কোনো কারণে স্নায়ুকোশ বিনষ্ট হলে এটি পুনরায় পরিপূরণ হয় না। নিউরোগ্লিয়া মৃত স্নায়ুকোশের শূন্যস্থান পূরণ করে।
আদর্শ নিউরোনের গঠন (Structure of A Typical Neurone)
আদর্শ নিউরোনের (স্নায়ুকোশের) প্রধান তিনটি অংশ বর্তমান, যথা-কোশাদেহ বা সোমা বা সাইটন বা পেরিক্যারিয়ন, অ্যাক্সন এবং ডেনড্রন।
1. কোশদেহ (Cell Body)
- আকার-গোলাকার, ত্রিভুজাকৃতি, নক্ষত্রাকৃতি, বহুভুজাকৃতি।
- ব্যাস: 5-20µ হতে পারে।
- দেহের অন্যান্য কোশের মতো নিউরোনও কোশঝিল্লি, নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম দ্বারা গঠিত। তবে অন্যান্য কোশের সঙ্গে এই কোশের পার্থক্য আছে।
- কোশের অভ্যন্তরে সুস্পষ্ট বৃহৎ নিউক্লিয়াস বর্তমান। ক্রোমাটিনের স্বল্পতার জন্য নিউক্লিয়াস অস্পষ্ট বর্ণ গ্রহণ করে।
- সেন্ট্রোজোম নিষ্ক্রিয় থাকায় স্নায়ুকোশ বিভাজিত হয় না। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গেঙ্গ আকারে বৃদ্ধি পায়।
- সাইটোপ্লাজম দানাযুক্ত এবং তত্ত্বময়। অসংখ্য মাইটোকন্ড্রিয়া, অন্তঃকোশীয় জালক, গলগি বস্তু, লাইসোজোম দেখা যায়। নিজল দানাগুলি (missi granules) রাইবোনিউক্লিও প্রোটিন দ্বারা গঠিত।
- নিজল দানাগুলি স্নায়ুপ্রবাহের সময় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এই দানাগুলির হ্রাসবৃদ্ধি স্নায়ুকোশের বিভিন্ন অবস্থার উপর নির্ভরশীল। (vii) নিউরোফাইব্রিল (neurofibrils) স্নায়ুকোশের ডেনড্রন প্রান্ত থেকে
- অ্যাক্সন প্রান্ত পর্যন্ত কোশদেহের মধ্য দিয়ে প্রসারিত থাকে। (২) কোশদেহ থেকে এক বা একাধিক পাতলা প্রোটোপ্লাজমীয় প্রবর্ধক নির্গত হয়, এদের অ্যাক্সন এবং ডেনড্রন বলে।
- কোশদেহ মস্তিস্কের ধূসর বস্তু এবং সুযুগ্নাকান্ডে উপস্থিত।
2. ডেনড্রন (Dendron)
- কোশদেহ থেকে উত্থিত ক্ষুদ্র, শাখান্বিত প্রবর্ধককে ডেনড্রন বলে।
- প্রতিটি ডেনড্রন শাখান্বিত হয়ে ক্ষুদ্র শাখায় বিভাজিত হয়, এদের ডেনড্রাইট (dendrite) বলে। ডেনড্রনের শাখা প্রশাখাগুলি কাঁটার মতো আর দ্বারা আবৃত থাকে তাদের গেমিউল (Gemmules) বলে এবং অগ্রভাগে বর্তমানে গুটিগুলিকে প্রান্তীয় বোতাম (Terminal knobs) বলে।
- অ্যাক্সনের তুলনায় এই প্রবর্ধকগুলি ছোটো হয়।
- কোশদেহ থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেঙ্গ এর ব্যাস কমতে থাকে।
- অ্যাক্সনের তুলনায় ডেনড্রন ছোটো হলেও সংজ্ঞাবহ নার্ভের ডেনড্রন খুবই লম্বা হয়।
- ডেনড্রনের মধ্যে নিউরোপ্লাজম, নিজল দানা, নিউরোফাইব্রিল এবং মাইটোকনড্রিয়া বর্তমান।
- ডেনড্রনের মাধ্যমে উদ্দীপনা কোশদেহে প্রবেশ করে।
- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ডেনড্রনগুলির দৈর্ঘ্য ছোটো এবং শাখা-প্রশাখা বেশি। প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের ডেনড্রনগুলির দৈর্ঘ্য খুব বড়ো এবং শাখা- প্রশাখা স্বল্প।
3. অ্যাক্সন (Axon)
- নিউরোনের বহির্বাহী শাখাকে অ্যাক্সন বলে। এটি দীর্ঘ সূতোর মতো। (ii) অ্যাক্সনের শাখা-প্রশাখা স্বল্প। এদের অক্ষ শাখা (collatieral) বলে।
- কোশদেহের অ্যাক্সন হিলক (Axon hillock) অংশ থেকে এর উৎপত্তি। অ্যাক্সন হিলক কোশদেহের শাঙ্কবাকৃতি উঁচু অংশ।
- কোশদেহের ঝিল্লি সারা অ্যাক্সনকে আবৃত করে রাখে। এই ঝিল্লিকে অক্ষ ঝিল্লি বা অ্যাক্সোলেমা (axolema) বলে।
- অ্যাক্সনের অ্যাক্সোলেমার বাইরে অপর একটি আবরণ বর্তমান থাকে। একে নিউরোলেমা (neurolemma) বা নিউরিলেমা (nurilemma) বলে। অ্যাক্সনের সাইটোপ্লাজমকে অ্যাক্সোপ্লাজম (axoplasm) বলে। এতে নিউরোফাইব্রিল ও মাইটোকনড্রিয়া থাকলেও নিজল দানা ও গলগি বডি অনুপস্থিত।
- অ্যাক্সনের কেন্দ্রীয় অংশকে অক্ষীয় স্তম্ভ (axis cylinder) বলে।
- অ্যাক্সন শেষপ্রান্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত, ওই শাখাগুলিকে টেলোডেন্ড্রিয়া (telodendria) বলে। ওই শাখাগুলির প্রান্তদেশ গুটির মতো, এ কারণে এদের প্রাপ্ত বুরুশ (end brush) বা টারমিন্যাল বাটনস (Terminal buttons) বা প্রান্তীয় স্ফীতি (terminal knobs) বলে।
- অ্যাক্সোলেমা ও নিউরোলেমার মাঝে মায়েলিন সিদ (myelin sheath) বা মেডুলারি আবরণ বর্তমান যা প্রোটিন এবং স্নেহপদার্থ দ্বারা গঠিত। মায়েলিন সিদযুক্ত স্নায়ুতত্ত্বকে মায়েলিন স্নায়ুতত্ত্ব (Myelinated nerve fibre) বলে।
- ফিতার মতো এক ধরনের চ্যাপ্টা কোশ, সোয়ান কোশ (Schwann cell) মায়েলিন আবরণীকে বাইরে থেকে ঘিরে থাকে। এই কোশ থেকেই মায়েলিন আবরণ উৎপন্ন হয়।
- মায়েলিন আবরণী সব অ্যাক্সনে নাও থাকতে পারে। যে সকল অ্যাক্সন মায়েলিন আবরক দ্বারা আবৃত থাকে না তাদের অমায়েলিন স্নায়ুতত্ত্ব (Non myelinated nerve fibre) বলে।
- মায়েলিন স্নায়ুতন্ডুতে অ্যাক্সনের নিয়মিত ব্যবধানে মায়েলিন আবরণী থাকে না এবং ওই স্থানকে র্যানভিয়ারের পর্ব (Nodes of Ranvier বলে। (স্নায়ুতন্তু বলতে অ্যাক্সনকেই বোঝায়।)
- দুটি র্যানভিয়ার পর্বের মধ্যবর্তী অংশকে অন্তঃপর্ব (Internode) বলে।
- কোশদেহের সাইটোপ্লাজম ও অ্যাক্সনের সাইটোপ্লাজম একসাথে যুক্ত।
- অ্যাক্সনের দৈর্ঘ্য বিভিন্ন স্নায়ুকোশে বিভিন্ন, কখনও কখনও লম্বায় এটি এক মিটারের চেয়েও বড়ো হয়।
- অ্যাক্সনের ব্যাস 0.1 থেকে 10 µm (মানুষে), কিছু মেরুদন্ডীতে 25 µm, আবার জ্যায়ান্ট স্কাইডে (Loligo) 1500 µm
প্রতিটি স্নায়ুতত্ত্ব এন্ডোনিউরিউয়াম (Endoneurium) নামক ঝিল্লির দ্বারা আবৃত এবং একে অপর থেকে পৃথক থাকে। কতকগুলি স্নায়ুতন্তু একত্রে মিলনের ফলে উৎপন্ন হয় স্নায়ুতত্ত্ব গুচ্ছ। এই স্নায়ুতন্তুগুচ্ছগুলি পেরিনিউরিয়াম (Perineurium) নামক ঝিল্লি দ্বারা ঢাকা থাকে এবং পরস্পর পৃথক থাকে।
পুনরায় কতকগুলি স্নায়ুতন্তু lগুচ্ছ একত্রে মিলিত হয়ে গঠন করে একটি স্নায়ু যা এপিনিউরিয়াম (epineurium) নামক ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে।
মায়েলিন স্নায়ুতত্ত্বর কাজ [ Functions of Myelin Nerve Fibres ]
- পাশাপাশি প্রবাহিত স্নায়ুতন্ডুতে সংবেদন পরিবাহিত হতে যাই দেয়।
- স্নায়ুতত্ত্বর পরিপোষণেও সহায়তা করে।
এই স্নায়ুতন্ডুর পরিবহণ ক্ষমতা খুব বেশি। সংবেদন র্যানভিয়ার পর্বে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। একে নৃত্যগ পরিবহণ (dancing conduction) বলে। কিন্তু অমায়োলিন তস্তুতে সংবেদন প্রবাহিত হয় পাশাপাশি এবং সামনের দিকে। এদের পরিবহণ ক্ষমতা তুলনায় কম।
অ্যাক্সনের প্রধান কাজ কোশদেহ থেকে সংবেদন কার্যকারী অঙ্গো, যথা-পেশি বা গ্রন্থিতে প্রেরণ করা। এছাড়া এক নিউরোন থেকে সাইন্যাপদের মাধ্যমে পরবর্তী নিউরোনে পৌঁছায়। এছাড়া এটি পেশি কোশে সংবেদন প্রেরণ করে নিউরোমাস্কুলার জাংশন (Neuro muscular junction) বা মোটর এন্ড প্লেটের (Motor end plate) গঠনের দ্বারা।
স্নায়ুকোশের শ্রেণিবিভাগ [ Classification of Nerve Cell ]
A. প্রবর্ধিত অংশের সংখ্যা অনুযায়ী –
- মেরুবিহীন স্নায়ুকোশ (Apolar nerve cell): এই প্রকার স্নায়ুকোশে কোনো ডেনড্রন বা অ্যাক্সন থাকে না। এই প্রকার কোশ খুবই বিরল।
- একমেরু স্নায়ুকোশ (Unipolar nerve cell) : এই কোশে একটি মাত্র অ্যাক্সন বর্তমান। উদাহরণঃ অমেরুদণ্ডী প্রাণীর স্নায়ুকোশ। পঞ্চম করোটি স্নায়ুর মেসেনকেফালিক নিউক্লিয়াসে এই প্রকার কোশ থাকে।
- ছদ্ম একমেরু স্নায়ুকোশ (Pseudo unipolar nerve cell): এই কোশের ডেনড্রন এবং অ্যাক্সন একটি বৃন্ত থেকে উৎপন্ন হয়। সুষুম্নাকান্ডের পৃষ্ঠ স্নায়ুগ্রন্থিতে এই রকম কোশ দেখা যায়।
- দ্বিমেরু স্নায়ুকোশ (Bipolar nerve cell) : এই কোশের একটি করে অ্যাক্সন ও ডেনড্রন থাকে।উদাহরণঃ অক্ষিপট এবং অন্তঃকর্ণের স্পাইরাল গ্যাংলিয়ায় এই কোশ পাওয়া যায়।
- বহুমেরু স্নায়ুকোশ (Multipolar nerve cell): এই কোশের একটি অ্যাক্সন ও একাধিক ডেনড্রন থাকে। উদাহরণঃ মস্তিষ্কের স্নায়ুকোশ।
B. আবরণীর ভিত্তিতে –
মেডুলেটেড (Medullated or Myelinated) : এই প্রকার স্নায়ুকোশে অ্যাক্সনের অ্যাক্সোলেমার বাইরে মায়েলিন আবরণী থাকে। স্তনাপাইনে ক্ষেত্রে এর ব্যাস 1 µm বা তারও বেশি। মস্তিষ্কের এবং সুষুম্নাকান্ডের শ্বেতবস্তুতে এইপ্রকার স্নায়ুকোশ পাওয়া যায় এবং করোটি এবং সুধুমা গঠন করে। র্যানভিয়ানের পর্ব এবং ইন্টারনোড বিদ্যমান। স্নায়ুস্পন্দন দ্রুত এবং লাফিয়ে লাফিয়ে চলে।
নন-মেডুলেটেড (Non-medullated or Non-myelinated) : এই প্রকার স্নায়ুতন্ডুতে মায়েলিন আবরণী অনুপস্থিত। এটি মস্তিয় ও সুষুম্নাকাণ্ডের ধূসর বস্তুতে এবং স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রে পাওয়া যায়। র্যানভিয়ারের পর্ব এবং ইন্টারনোড অনুপস্থিত। স্নায়ু স্পন্দনের গড়ি মন্থর।
C. কাজের ভিত্তিতে –
- সংজ্ঞাবহ নিউরোন (Sensory or Receptor or Afferent Neurons) : এরা দেহের বিভিন্ন গ্রাহক অংশ থেকে উদ্দীপনা মস্তিষ্কে ব সুষুম্নাকান্ডে পৌঁছে দেয়।
- আজ্ঞাবহ বা চেষ্টীয় (Motor or Effactor or Efferent Neurons) : উদ্দীপনা মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকান্ড থেকে দেহের বিভিন্ন কারক আংশে পৌঁছে দেয়।
- সহযোগী নিউরোন (Adjustor or Connector or Relaying Neurons or Interneurons) : এই নিউরোনগুলি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে এক নিউরোন থেকে অপর নিউরোনে সংবেদ প্রেরণ করে। এরা না সেনসরি না মোটর প্রকৃতির। এরা আগত সংবেদকে একত্রিত করে ও বিশ্লেষণ করে এবং সংবেদকে স্নায়ুতন্ত্রের অন্য অংশে প্রেরণ করে। দেহের একই দিকে সংযোগ স্থাপনকারী সহযোগী নিউরোনকে অ্যাসোসিয়েশন ইন্টারনিউরোন (Association interneurone এবং বিপরীত দিকে সংযোগ স্থাপনকারী সহযোগী নিউরোনগুলিকে কমিসিউরাল নিউরোন (Commissural neurone) বলে।
- নিউরোসিক্রেটারি নিউরোন (Neurosecretory Neurons) : এই সব নিউরোন উদ্দীপনা পরিবহণের সঙ্গে সঙ্গে নিউরো হরমোন ‘সরণ করে। এদের অ্যাক্সনের দূরবর্তী প্রান্ত সর্বদা রক্তবাহের ছ থাকে। অক্সিটোসিন, ভ্যাসোপ্রেসিন বা ADH, নরএপিনেফ্রিন এবং অমেরুদন্ডীদের একডাইজোন, জুভেনাইল হরমোন ইত্যাদি হল নিউরো হরমোনের উদাহরণ।
D. প্রেরক পদার্থ নিঃসরণের ওপর নির্ভর করে –
- অ্যাড্রিনারজিক (Adrenergic): উদ্দীপনা সঞ্চারণকালে এই সব স্নায়ুতন্তু থেকে নর-অ্যাড্রিনালিন, অ্যাড্রিনালিন, ডোপমাইন ও সেরোটোনিন নিঃসৃত হয়। উদাহরণ: গ্যাংলিয়ন পরবর্তী সিমপ্যাথেটিক স্নায়ু।
- কোলিনারজিক (Cholenergic) : উদ্দীপনাকালে এইসব ( স্নায়ুতত্ত্ব থেকে অ্যাসিটাইল কোলিন নিঃসৃত হয়। উদাহরণ। প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুর গ্রন্থি পরবর্তী স্নায়ু।
ধারক কোশ [Supporting Colls]
ধারক কোশ গুলি অপরিবাহী এবং নিউরোনের খুব নিকট সংস্পর্শে অবস্থান করে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে এই ধারক কোশগুলি নিউরোগ্লিয়া (Neuroglea) বা গ্লিয়াল সেল (Glial cells) বলে। পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রে সোয়ান কোশ যা স্নায়ুকোশ প্রবর্ধককে আবৃত করে এবং স্যাটেলাইট কোশ যা গ্যাংলিয়ার কোশ দেহকে আবৃত করে। সোয়ান কোশ এবং স্যাটেলাইট কোশ নিউর্যাল ক্রেস্ট সেল থেকে উৎপন্ন হয়। এগুলি তিন ধরনের-। (a) সোয়ান কোশ, (b) স্যাটেলাইট কোশ এবং (c) নিউরোগ্লিয়া।
(a) সোয়ান কোশ [Schwann Cell]
নিউরোনের অ্যাক্সন মায়েলিন সিদ দ্বারা আবৃত থাকে। নিউরোলেমার ঠিক নীচেই নিউক্লিয়াস সমন্বিত সাইটোপ্লাজমকে নিউক্লিয়াই অব সোয়ান সেলস্ বলে এবং এরা নিউরোলেমা গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সোয়ান কোশ প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রে স্নায়ুকোশ প্রবন্ধককে আবৃত করে।
(b) স্যাটেলাইট কোশ [Satellite Cell] :
গ্যাংলিয়ার নিউরোনের কোশদেহ যেসব ক্ষুদ্র, ঘনকাকৃতি কোশ দ্বারা আবৃত থাকে তাদের স্যাটেলাইট কোশ বলে। প্যারাভার্টিব্রাল এবং পেরিফেরাল গ্যাংলিয়ার নিউরোনের প্রবর্ধক স্যাটেলাইট কোশেদের মধ্যে প্রবেশ করে সাইন্যাপস তৈরি করে। স্যাটেলাইট কোশ নিউরোনের চারপাশের সাইটনের নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোপরিবেশ বজায় রাখে। এছাড়া স্যাটেলাইট কোশ বৈদ্যুতিক ইনসুলেশন এবং বিপাকীয় আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করে।
(c) নিউরোগ্লিয়া [Neuroglea]
নিউরোগ্লিয়া বা গ্লিয়াল কোশ 4 প্রকারের, যথা- (i) অলিগোডেড্রোগ্লিয়া, (ii) অ্যাস্ট্রোসাইট, (iii) মাইক্রোগ্লিয়া এবং (iv) এপেনডাইমাল কোশ।
- অলিগোডেন্ড্রোগ্লিয়া (Oligodendroglea) : কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মায়েলিন গঠনকারী কোশ। পাশাপাশি অনেক অ্যাক্সনের মায়েলিন গঠন করে।
- অ্যাস্ট্রোসাইট (Astrocyte) : রক্ত জালক এবং নিউরোনের মধ্যে পুষ্টিদ্রব্যের প্রবাহ ঘটায়।
- মাইক্রোগ্লিয়া (Microglea) : বহিরাগত বস্তু এবং ব্যাকটেরিয়াদের ভক্ষণ করে। সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র নিউরোগ্লিয়া কোশ এবং এদের নিউক্লিয়াস দণ্ডাকৃতির। এদের কোশদেহ এবং প্রবর্ধক অসংখ্য কাঁটা দ্বারা আবৃত। এর মধ্যে থাকে অসংখ্য লাইসোজোম, ভেসিকলস্, অল্প ER, অণুনালিকা এবং মাইক্রোফিলামেন্ট। এরা রক্ত ও সেরিব্রো-স্পাইনাল ফ্লুইডের মধ্য বিভিন্ন উপাদানের বিনিময় ঘটায়, রক্তে নিউরোপেপটাইড মেশায় এবং CSF উৎপাদন করে।
- এপেনডাইমাল কোশ (Apendymal Cells) : এরা মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকান্ডের কেন্দ্রীয় নালির আবরণ গঠন করে।
ধারক কোশের কাজ [ Functions of Supporting Cells ]
- সূক্ষ্ম নিউরোন প্রবর্ধককে ভৌতিক অবলম্বন প্রদান করে।
- নিউরোনের রোশ দেহ এবং প্রবর্ধকদের বৈদ্যুতিক ইনসুলেশন প্রদান করে।
- রক্তবাহতন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে বিপাকীয় বস্তুর আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করে।
স্নায়ু কলার কাজ [Functions of Nervous Tissue]
- তড়িৎ রাসায়নিক পদ্ধতিতে জীবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং তাদের কারো লোক সাইনাপ করে স্নায় কলা।
- অ্যাক্সন অপর নিউরোনের চিনছি, তড়িৎ রাসায়নিক পদ্ধতিত্যোঙ্গন পেশিতন্ডুর মধ্যে প্রবেশ করে তার আয়োসায়নিক সাইটাসেন বলে।
- এক প্রকার রাসায়নিক হয়, বা অ্যানর শাখা-প্রশাখার মধ্যে যোগসূত্র ঘটায়। এই রাসায়নিক পদার্থটিকে নিউরোহিউমর (Neurohumor) বলে। বিভিন্ন বই সাইনাপসের ডেনড্রন ও কোলিন, নর-অ্যাড্রিনালিন স্নায়ুকলাতে সর্বদা একই দিকে স্নায়ু সংবেদ ইত্যাদি পরিবাহিত করে।
====>>> Final HS History Suggestion 2025